মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ১০টি উপায়

আমি মনিরুল হাসান আজকাল মানসিক চাপ মানুষের জন্য একটি খুব সাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে,যা বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া দ্বারা প্রকাশিত হয়। সাধারণত কোন বিষয়ের উপর ভয় এবং কোন কাজকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার ফলে আমাদের জীবনে প্রায়ই এই সমস্যা টা দেখা দেয়।
এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের ‌এর লক্ষণ এবং এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা দরকার। নিচে তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

পোস্ট সূচিপত্র: মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ১০টি উপায়।

মানসিক চাপ কি?

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস হলো কোন হুমকি বা ভয়ের মুখে মানুষের শরীরের স্বাভাবিক মানসিক ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া। এটি এমন একটি অনুভূতি যখন কোন ব্যক্তি তার ক্ষমতা বা চাহিদা ও বাস্তবিক পরিস্থিতির মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব অনুভব করে। সাধারণত অ্যাড্রিনালিন ও কর্টিসল হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে শরীর এই চাপের মোকাবেলা করে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী অতিরিক্ত চাপ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এর ফলে বিরক্তি, রাগ, মন খারাপ থাকা, মনযোগের অভাব এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন, খাওয়া দাওয়ায় অরুচি ও অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।

মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রভাব:

মানসিক চাপের প্রভাবে আমাদের শরীরে বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক নেতিবাচক লক্ষণ দেখা দেয় ‌। যেমন ,
  • মাথা ব্যথা: এটি মানসিক চাপের একটি খুব সাধারণ শারীরিক লক্ষণ। যা অতিরিক্ত চিন্তা ও বিভিন্ন জটিল বিষয়ে মোকাবেলা করতে এই সমস্যা হয়। 
  • ক্লান্তি ও দূর্বলতা: স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত বোধ করা বা শরীরে দুর্বলতা অনুভব করা । মানসিক চাপ শরীরেও প্রভাব ফেলার কারণে এমন ক্লান্তি  ও দুর্বলতা অনুভব হয়। 
  • হজমের সমস্যা: বদহজম, পেটে অস্বস্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। মানসিকভাবে অশান্তিতে থাকলে অরুচির কারণে হজমের সমস্যা হয় ‌।
  • দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন: বুক ধড়ফড় করা এবং দ্রুত শ্বাস নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। বিভিন্ন বিষয়ের ভয় ও অতিরিক্ত চিন্তার ফলে এমন হয়।  
  • অতিরিক্ত ঘাম ও গরম লাগা: শরীর অতিরিক্ত গরম অনুভব করা বা বেশি ঘাম হওয়া ও এই মানসিক চাপের একটি লক্ষণ।
  • ঘুমের সমস্যা: সহজে ঘুম না আসা, ঘুমের মধ্যে নানা চিন্তা আসায় ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া বা অতিরিক্ত ঘুম হ‌ওয়া । যা আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আরো প্রভাবিত করে ফেলে।
  • মনোযোগের অভাব: কাজকর্মে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হ‌ওয়া । মানসিক চাপের ফলে এই সময় আপনার মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ না করায় মনোযোগের অভাব ঘটে। যা অত্যন্ত খারাপ বিষয়।
  • অস্থিরতা ও খিটখিটে মেজাজ: এই সময় আপনি উদ্বিগ্ন বা অস্থিরতা বোধ করেন। যা আপনার কোন কিছুতে ভালো লাগে না। সবসময় বিরক্তি বা মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে।
  • সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব দের থেকে দূরে দূরে থাকা বা তাদের এড়িয়ে চলা।কারো সাথে এই সময় মিশতে বা কথা বলতে ভালো না লাগা।
  • সহজে অসুস্থ হ‌ওয়া: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যা‌ওয়ার ফলে এই সময় ঘন ঘন জ্বর, সর্দি, কাশি ও অন্যান্য সংক্রমণের শিকার হ‌ওয়ার ঝুঁকি থাকে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ১০টি উপায়:

মানসিক চাপ অত্যন্ত ভয়ংকর এবং খারাপ একটি রোগ বলা যায়। যা আপনাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে দূর্বল করে ফেলতে পারে।তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় জানা থাকলে এবং সেসব উপায় মানলে এই মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচতে বা মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠতে পারি।  নিচে সেসব গুরুত্বপূর্ণ ১০টি উপায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
  1. মন খুলে কথা বলুন: আপনার কাছের মানুষদের সাথে আপনার অনুভূতি গুলো  ভাগ করে নিন।যেমন, পরিবার বা জীবন সঙ্গীনির সাথে, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন যারা আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে। এতে আপনার ভেতরের চাপ অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে। আপনি ফুরফুরে অনুভব করবেন। 
  2. শরীরচর্চা করুন: নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্ট্রেস হরমোন কমে যায় এবং মন ভাল করার হরমোন নিঃসরণ  হয়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, হালকা দৌড়ানো ও সকাল সকাল যোগব্যায়াম করতে পারেন। এতে করে আপনার বাড়তি স্ট্রেস কমে আপনার মনকে আরাম দিবে। 
  3. পর্যাপ্ত ঘুমান :রাতে পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ভালো ঘরের জন্য ঠান্ডা পরিবেশ এবং আরামদায়ক বিছানা বাছাই করুন। ডিজিটাল ডিভাইস অথবা এমন কিছু যা  আপনাকে ঘুম থেকে বিরত রাখে তা দূরে সরিয়ে রাখুন। পর্যাপ্ত ঘুম শরীর ও মনকে সতেজ রাখে যা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 
  4. স্বাস্থ্যকর খাবার খান: স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আঁশসমৃদ্ধ খাবার, তাজা শাক সবজি ও ফলমূল এবং গোটা শস্য জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। জাংকফুড , অতিরিক্ত তেল এবং অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। 
  5. শখের প্রতি মনোযোগ দিন: প্রতিদিনের ব্যস্ততা থেকে কিছুটা সময় নিজের পছন্দের কাজে যেমন, বই পড়া, ছবি আঁকা, বাগানের ফুল চর্চা ও পছন্দের কোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন এটি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। সময় পেলে ঘুরতে যান ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার মনকে শান্ত রাখতে পারেন। 
  6. মেডিটেশন করুন: কয়েক মিনিট সকালে ঘুম থেকে উঠে মেডিটেশন চর্চা করলে মন শান্ত হয় এবং মনোযোগ বাড়ে যা অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপায়। বিভিন্ন অ্যাপ বা ইউটিউবে এ ধরনের গাইড খুঁজে পাবেন।  যা দেখে আপনি মেডিটেশন করে নিজেকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে পারেন নিজেকে। 
  7. প্রকৃতির সাথে সময় কাটান: প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা , যেমন পার্কে হাটা বা বাগানের সময় কাটানো ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি আপনার মনকে শান্ত ও আপনার মানসিক চাপ কমাতে পারেন। 
  8. মোবাইল ব্যবহার কমান: অতিরিক্ত মোবাইল বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই এসব মোবাইল ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকা আপনার মনকে শান্ত রাখবে এবং আপনার মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  9. ইতিবাচক চিন্তা করুন: নেতিবাচক চিন্তা গুলো আপনার মনকে অশান্ত করে তুলে । তাই নেতিবাচক চিন্তা গুলো এড়িয়ে চলুন সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করুন। আপনি রংধনুর মত আনন্দময় দৃশ্য কল্পনা করতে পারেন যা আপনার মনকে আনন্দিত করে তুলবে। যা মানসিক চাপ কমানোর একটি অন্যতম ভালো উপায়। 
  10. সীমা নির্ধারণ করুন: যদি কোন কাজ বা মানুষ আপনার মানসিক চাপ বাড়াতে থাকে তবে সেই বিষয়ে একটা নির্দিষ্ট সীমা টেনে দিন ‌। সব কাজ বা  মানুষের থেকে দূরে থাকুন। হলে নিজের জন্য কিছুটা আলাদা সময় পাবেন। যাতে আপনি শান্ত থাকতে পারেন এবং মানসিক দিক দিয়ে চাপ মুক্ত থাকতে পারেন। প্রয়োজনে পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।  

আমার মতামত:

দৈনন্দিন জীবনে অনিয়ম ও এলোমেলো জীবনযাপনের ফলে আমাদের অনেকেরই এমন সমস্যা দেখা দেয়। অনিয়মিত ঘুম, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে এমন মানসিক চাপের সৃষ্টি। তাই আমাদের নিয়মমাফিক ভালো ভাবে চলা উচিত। এছাড়াও যখন মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয় তখন একজন মনোবিজ্ঞানী বা স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ ও সাহায্য নিতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মনিরুল24-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url